Loader
শিক্ষা, শান্তি, সেবা ও সামাজিক উন্নয়নই নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন-এরমূল লক্ষ্য। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরোপকার-এর মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কল্যাণই আমাদের একমাত্র ব্রত। আর্তমানবতার সেবা, সমাজ সংস্কার, কর্মসংস্থান তৈরি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এতিম, গরিব, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভরণপোষণ, ছিন্নমূল ও পথবাসীদের পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ সব শ্রেণির নাগরিকদের নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি আমরা।

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়


যেতে দিতে মন চায় না কারও, মানুষ তবু চলে যায়! তারপরও মনের জানালায় ঊঁকি দিয়ে যায় সেই প্রিয় মুখ। তিনি যমুনা গ্রুপের শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ১৩ জুলাই ২০২০। তিনি ছিলেন দেশের শিল্পখাতের একজন সফল উদ্যোক্তা। ছিলেন মিডিয়াবান্ধব।
বিনোদন জগতের বিশিষ্টজন ও ছোট-বড় অনেক তারকার সঙ্গেও ছিল তার আন্তরিক সম্পর্ক। তার মুত্যতে শোকাহত দেশের শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও।


সৈয়দ আবদুল হাদী, সঙ্গীতশিল্পী
আমার সঙ্গে নুরুল ইসলাম বাবুল সাহেবের সরাসরি পরিচয় ছিল না। কিন্তু একজন সফল মানুষ হিসেবে তাকে আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। তিনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তৈরির পাশাপাশি দুটি মিডিয়া হাউস যুগান্তর ও যমুনা টিভি প্রতিষ্ঠা করে তার সুন্দর রুচির পরিচয় দিয়েছেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠান মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তো থাকবেই কিন্তু যমুনা টিভি ও যুগান্তর তাকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে। শুধু ব্যবসাতেই তার চিন্তা সীমিত থাকেনি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান ছিল উল্লেখ করার মতো। তার প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তার গড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই সফল। এ ছাড়া তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। দেশকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। আমি তার জন্য মন থেকে প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
 
আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, অভিনয়শিল্পী ও সংসদ সদস্য
নুরুল ইসলাম বাবুলের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক আগের। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার চলে যাওয়ায় আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার কাছে এসে বলেন, তিনি যুদ্ধে যেতে চান। আমি তাকে সে সময় একটি রাইফেল আনার দায়িত্ব দেই। তিনি সেটি নিয়ে রাজধানীর মগবাজারে আসবেন। বাবুল লুঙ্গি পরে তার মধ্যে কৌশল করে ঠিকই রাইফেল নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু আসার পথে আর্মির চেকপোস্টে ধরা পড়েছিলেন। সে সময় তিনি কীভাবে বেঁচে ফিরে আসেন, তা আজও অজানা আমার কাছে। যুদ্ধের পর থেকে দেখলাম বাবুল ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে তার সমৃদ্ধি ঈর্ষণীয় ছিল। মানুষের জন্য আরও কিছু করার প্রচেষ্টা তার ছিল। কিন্তু তা আর হল না। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
 
সোহেল রানা, অভিনয়শিল্পী
যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল না ফেরার দেশে চলে গেলেন। এটা দেশের জন্য অবশ্যই একাট দুঃসবাদ। অনেকটা নীরবেই চলে গেলেন। তার এ চলে যাওয়া উদ্যোক্তা মহলের বড় একটা ক্ষতিই। সারা জীবন নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়েই দেশের স্বার্থে কাজ করে গেলেন। রেখেও গেলেন সব কিছু। খারাপ লাগছে। আসলে পরিজন চলে গেলে কষ্ট তো লাগবেই। কিন্তু আল্লাহর ডাক এলে তো আর থাকা যায় না। আমাদেরও চলে যেতে হবে একদিন। বাবুলের চলে যাওয়া অনেক কষ্টের। এ মুহূর্তে তার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আল্লাহ তার ভুল মাফ করুন, জান্নাত দান করুন এটাই দোয়া করি।
 
ফকির আলমগীর, সঙ্গীতশিল্পী
‘এই যে এত টাকা সম্পত্তি এ সব কিছুই সঙ্গে যাবে না। আসছি একা যাব একা’- বাবুল ভাইয়ের এ কথা আমার কানে এখনও বেজে ওঠে। আজও তার এসব কথার ভিডিও দেখছি। একজন মানুষ কতটা সাধারণ হলে এমন কথা বলতে পারেন। আসলে বাবুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পারিবারিক। কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে আমি ও আমার নাতিরা মিলে গান করছিলাম। বাবুল ভাই কাছে এসে আমার নাতিদের জড়িয়ে ধরে ১০ হাজার টাকা উপহার দিয়েছিলেন। উপহার বড় কথা নয়, বাবুল ভাই শিশুদের মনও জয় করতে পারতেন। যেদিন তিনি মারা গেলেন আমার নাতিরা খুব কেঁদেছিল। কত শত স্মৃতি তার ও তার পরিবারের সঙ্গে তা বলে শেষ করা যাবে না। বাবুল ভাইকে আল্লাহ জান্নাত দান করুন। ভাবি ও তার সন্তানদের শোক সহ্য করার শক্তি দান করুন এটাই দোয়া করি।

নাঈম-শাবনাজ, অভিনয়শিল্পী
খবরটি শোনার পরই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। এই গত ফেব্রুয়ারি মাসেই তো বাবুল ভাই ও ভাবির সঙ্গে দেখা হয়েছিল। খুব খুশি হয়েছিলেন আমাদের দেখে। বড় ভালো মানুষ ছিলেন। খুব বেশি মিশিনি, কিন্তু যখনই যেখানে দেখা হয়েছে খুব আগ্রহ নিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করেছেন। মনেই হয়নি তিনি এত বড় একজন ব্যবসায়ী। কোনো অহঙ্কার দেখিনি তার মধ্যে। একেবারেই সাধারণ মনে হতো। জীবনের বেশিরভাগ সময় দেশের জন্য, নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করে গেছেন। আসলে আমাদেরও একদিন চলে যেতে হবে। দোয়া করি, বাবুল ভাই ওপারে ভালো থাকুক, আল্লাহ তার পরিবারের সদস্যদের তাকে হারানোর শোক সহ্য করার শক্তি দিন।
 
রোজিনা, অভিনয়শিল্পী
নুরুল ইসলাম বাবুল সাহেব শুধু বিজনেসম্যানই ছিলেন না, এ দেশের উন্নয়নের জন্য তার যে চিন্তাধারা ছিল সেটা সত্যিই বড় একটি বিষয়। তার সম্পর্কে বলতে গেলে খুবই কম বলা হবে আমার মনে হয়। আমার সঙ্গে সরাসরি তার পরিচয় ছিল না। তবে দূর থেকে তার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, বুঝেছি এবং তার কর্মকাণ্ডগুলো দেখেছি; তাতে তার সম্পর্কে অল্প কথায় বর্ণনা দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি ভালো মনের মানুষ ছিলেন এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ছিলেন। ছোট এই দেশের ভেতরে তার উন্নয়নের যে চিন্তাধারা ছিল এবং তার প্রতিষ্ঠানে যে অনেক মানুষ কাজ করছেন এসব ছোট কোনো বিষয় নয়। দেশ তার মতো একজন সফল মানুষকে হারিয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। দেশপ্রেমিক এই মানুষটিকে মানুষ আরও অনেক দিন মনে রাখবে বলে আমি মনে করি। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন।
 
উজ্জল, অভিনয়শিল্পী
করোনার এ সময়ে দুঃসংবাদ শুনতে শুনতে মানসিক অবস্থা একেবারেই খারাপ। প্রতিনিয়ত মৃত্যু সংবাদ শুনতে হচ্ছে। এ সময়ে যমুনা গ্রুপের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুলও চলে গেলেন। কিছুদিন আগেও তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। এতই সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন, তাকে দেখলে যে কেউ অবাক হয়ে ভাবতেন, ৪১ প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি! এতটাই সাধারণ ছিল তার চলাফেরা। প্রায় সব অঙ্গনেই তার বিনিয়োগ ছিল এবং সেটা দেশের মধ্যেই। একজন দেশপ্রেমী ব্যবসায়ীই শুধু দেশে বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে পারেন। তিনি করে দেখিয়েছেন। এ ধরনের দেশপ্রেমী একজন মানুষের চলে যাওয়া খুব কষ্টের। দোয়া কার ছাড়া আর তো কিছু বলার নেই। ওপারে ভালো থাকুক তিনি।
 
কনকচাঁপা, সঙ্গীতশিল্পী
চলতি বছর যুগান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যাওয়া হয়নি। তাই তার সঙ্গে শেষ দেখাও হল না। তার আগের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, নুরুল ইসলাম বাবুল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছিল। একেবারেই সাদাসিধে মানুষ। কথা বলে খুব ভালো লেগেছিল। এ মানুষটা না ফেরার দেশে চলে গেলেন। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে, কিন্তু মানুষের মনে রাখার মতো কাজ ক’জনই বা করতে পারেন। তিনি করতে পেরেছেন। দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখেছেন। অনেক কিছু গড়েছেন তিনি। এসব থেকে অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তাদের দোয়াও তার সঙ্গে রয়েছে। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুক, এটাই শুধু প্রার্থনা করি।
 
নূতন, অভিনয়শিল্পী
বাবুল ভাই চলে গেছেন আমার কাছে এ খবরটি এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না! তিনি সত্যিকার অর্থে একজন বড় মনের মানুষ ছিলেন। টাকা-পয়সা তো অনেকেরই আছে বা থাকে; সবাই কিন্তু বড় মনের হতে পারেন না। বাবুল ভাই সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এটা শুধু তার শিল্প প্রতিষ্ঠান দিয়ে নয়। গোপনে অনেক মানুষের কাঁধে সহায়তার হাত রাখার চেষ্টা করেছেন। মূলত যারা তার সঙ্গে মিশতে পেরেছেন তারাই বুঝবেন বিষয়টি। এ মানুষটি নীরবে চলে গেলেন! তার এ চলে যাওয়া বড় রকম একটা ক্ষতি। আমি আশা করি আপনজন হারানোর শোক কাটিয়ে ভাবি ও তার ছেলেমেয়েরা সুন্দরভাবে বাবুল ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো করে যাবেন। দুনিয়াতে মানুষের অনেক রকম ভুল থাকে। বাবুল ভাইয়ের যদি কোনো ভুল থাকে আল্লাহ নিশ্চয়ই তা মাফ করে তাকে জান্নাত দান করবেন, এটাই দোয়া করি।

মনির খান, সঙ্গীতশিল্পী
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বাবুল ভাইয়ের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এত বড় শিল্পপতি হয়েও তার চালচলন ছিল একেবারেই সাধারণ। মানুষের কল্যাণের জন্য কত কিছুই না করেছেন তিনি। আমার জানামতে তিনিই দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী যিনি তার জীবনের অর্জিত সব অর্থ দেশেই বিনিয়োগ করেছেন। বিদেশে যার কোনো সম্পদ নেই। এর চেয়ে বড় দেশপ্রেম আর হতে পারে না। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, দেশের গর্বিত সন্তান। তার গড়া দুটি মিডিয়া যুগান্তর ও যমুনা টিভি দেশের কথাই বলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। আল্লাহ তাকে ওপারে ভালো রাখুক, এটাই কামনা করি।

আসিফ আকবর, সঙ্গীতশিল্পী
বাবুল ভাই এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ভাবিনি। আসলে করোনা আসার পর কত আপনজন হারালাম তা কল্পনা করতে পারি না। যুগান্তর-যমুনা টিভির সঙ্গে আমার আন্তরিক সম্পর্ক। বাবুল ভাই চেষ্টা করেছেন জনগণের পক্ষে কাজ করার। কতটুকু পেরেছেন তা সবাই জানেন। তিনি মারা গেছেন বলে তার প্রশংসা করতে হবে তা নয়, তিনি আছেন থাকবেন। তার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। দেশের অর্থনীতিতে তার ভূমিকা অনেক। এগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। বলা যায় দেশপ্রেমের যা কিছু দরকার সবকিছুই তার মধ্যে ছিল এবং তিনি সেটা করেও দেখিয়েছেন। ওপারে শান্তিতে ঘুমান বাবুল ভাই, দোয়া করি। 

রিয়াজ, অভিনয়শিল্পী
নুরুল ইসলাম বাবুল সাহেবের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না থাকলেও তাকে আমি পরোক্ষভাবে চিনি, জানি। তিনি টেলিভিশন চ্যানেল করেছেন, পত্রিকা করেছেন। যুগান্তরকে আমি প্রথমসারির পত্রিকা হিসেবেই বিবেচনা করি। যমুনা টিভিও দারুণ করছে। এ দুটি মিডিয়া হাউস ছাড়াও তার অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। আমি যতটুকু জানি যমুনা ফ্যান দিয়ে তার ব্যবসায়িক অগ্রযাত্রা শুরু হয়। অনেক কষ্ট ও ত্যাগের পর তিনি তার সব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। যা খুব সহজ কাজ নয়। তার এ কর্মকাণ্ডই তাকে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখবে। তার এভাবে চলে যাওয়া দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে আমি মনে করি। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।